অধিকাংশ কৃষক বীজতলা করতে পারেনি, পরিবেশ বিষেশজ্ঞদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব
নিজস্ব প্রতিনিধি: আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবণ শুরু। অথচ উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। মাঝে মধ্যে সামন্য কিছু ছিটে ফোটা পড়লেও তা ফসলের জন্য কোনো কাজে আসছেনা। এতে করে রোপা আমন চাষিরা মহাবিপাকে পড়েছেন। বৃষ্টির অভাবে রোপা আমন চাষ তো দুরের কথা অধিকাংশ কৃষক এখনো বীজতলা তৈরী করতে পারেনি। মৌসুমী বৃষ্টি যদি ঠিকমত না হয় তাহলে চলতি রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে কৃষকরা জানান।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মৌসুমী বৃষ্টি না হওয়ায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের ভু-গর্ভের পানি উত্তোলন করে বীজতলা তৈরী করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে পরিবেশ বিষেশজ্ঞদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে যে সব জেলা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা। পরিবেশ বিষেশজ্ঞরা আরও জানায়, বিগত ৩ বছর সাতক্ষীরা জেলায় ঠিকমত মৌসুমী বৃষ্টিপাত হয় না। যার প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন ফসলের উপর।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা দহকুলা এলাকার কৃষক পান্না হোসেন বলেন, প্রতি রোপা আমন মৌসুমে ১০ থেকে ১২ বিঘা পরিমান জমিতে ধান উৎপাদন করেন। কিন্ত গত দুই থেকে তিন বছর মৌসুমী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এখনো বীজতলা তৈরী করতে পারেননি তিনি। এই কৃষক বলেন, তার এলাকার অধিকাংশ কৃষক চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বৃষ্টি না হওয়াতে। অথচ এখন রোপা আমনের ভরা মৌসুম চলছে। কিন্ত এলাকার কৃষকরা এখনো আবাদ করতে পারেনি।
পাশ্ববর্তী কুখরালী গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবেন বলে বীজ ধান ক্রয় করেছেন প্রায় ২০ দিন আগে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো পর্যন্ত বীজতলা তৈরী পারেননি। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে এই সময়ে বীজতলা শেষ করে ধানের চারা রোপন শুরু করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বীজতলা তৈরী করতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে জানান তিনি।
পান্না হোসেন ও মতিয়ার রহমানের মতো জেলার হাজার হাজার কৃষক বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে আছেন বীজতলা তৈরীর জন্য।
অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমের জন্য জেলার সাতটি উপজেলা রোপা আমন চাষের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৫২৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ১১ হাজার ৯৩০ হেক্টর, তালায় ১০ হাজার ৭২০ হেক্টর, দেবহাটায় ৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৭ হাজার ১০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৯ হাজার ২৬০ এবং শ্যামনগর উপজেলাতে ১৬ হাজার ৮২৫ হেক্টর।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশের যে কয়টি জেলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তার মধ্যে অন্যতম উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা। এ জেলায় গত তিন বছর যাবত ঠিকমত মৌসুমী বৃষ্টিপাত হয়নি। এর ফলে বিভিন্ন ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া এমন আবহাওয়া যদি আগামী আরো ৫ বছর থাকে তাহলে মিঠা পানির মৎস্য চাষও ব্যাহত হবে। ইতোমধ্যে লবণ পানির মাছ উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু করেছে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হলে এখন থেকে ব্যাপক বনায়ন কর্মসুচি হাতে নেয়ার পাশাপাশি জলাশয় ও পুকুরে রিজার্ভ পানির ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এখনো আমন মৌসুম শেষ হওয়ার যথেষ্ট সময় আছে। তার পরও আমন চাষিদের মরামর্শ দেয়া হচ্ছে যে সব এলাকায় ভূ-গর্ভের পানি মিঠা সে সব এলাকাতে ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলন করে আমন বীজতলা তৈরী করতে হবে। তবে বৃষ্টির পানির কোনো বিকল্প নেই। কারন ভূ-গর্ভের পানিতে আর্সেনিকের পাশাপাশি আয়রন ও লবণ থাকে। এতে মাটি ও ফসলের জন্য ক্ষতিকর। তবে মৌসুমী বৃষ্টি না হওয়ার মুল কারন হিসেবে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন।