সামেক হাসপাতালে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবায় ভোগান্তি

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবায় চরম ভোগান্তি পাচ্ছেন রোগীরা বলে অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরা জেলার ২২ লক্ষ মানুষসহ অন্যান্য জেলার মানুষ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে ৩৬ জন ও আউটসোসিং নিয়োগে কাজ করছেন ৭৩ জনবল। তবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬২ জন চিকিৎসক ও ৭৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী সংকট রয়েছে। কিন্তু এই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সংকটের কারনে হাসপাতালে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ৩৬ জন চিকিৎসকরা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, সাতক্ষীরা জেলার মানুষের দৌর গড়ায় সুচিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিতে ও তার অবদানে কোটি কোটি টাকার ব্যয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংকটের কারনে দিন দিন স্বাস্থ্যসেবা যেন ভেঙে পড়ছে। জনবল সংকটের কারনে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না। হাসপাতালের অনেক আউটডোর ওয়ার্ডে নেই চিকিৎসক। হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনুমান শতাধিক জনবল বিনামূল্যে কাজ করছেন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবকরা এখনো নিয়োগ না পাওয়ায় তারা রোগীদের রীতিমত স্বাস্থ্যসেবা দিতে অনীহা করে। হাসপাতালে আউটডোর ওয়ার্ডে বর্তমানে ৩৬ জন চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। কিন্তু এই ৩৬ জন ওয়ার্ডে চিকিৎসকরা হাসপাতাল চলাকালীন পর্যন্ত সব রোগী দেখেই শেষ করতে পারে না। যার ফলে হাসপাতালের আউটডোর অনেকে রোগীরা চিকিৎসা না নিয়ে প্রায় সময় বাড়ি ফিরে যায়। আর হাসপাতাল থেকে ফিরে যাওয়া বেশীভাগ রোগীদের বে-সরকারি প্রাইভেট হাসপাতালে ও ক্লিনিকে চিকিৎসকদের মোটা অংকের ফি দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। জনবল সংকটের কারনে মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা এই ভাবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছে এবং ভোগান্তি পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রোগী ও তার স্বজনরা। তবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী যদি নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষসহ অন্যান্য জেলার মানুষ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবায় বঞ্চিত হবে না এবং ভোগান্তি পাবে না আর বাহিরে বে-সরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মোটা অংকের ফি দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে না। আর যদি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ না দেওয়া হয় তাহলে হাসপাতালে এই ভাবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবায় রোগীরা বঞ্চিত হবে এবং ভোগান্তি পেতেই থাকবে। তাই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দ্রুত নিয়োগ প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক ডা. এসজেড আতিক বলেন, হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, সর্বাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ বিশ্বমানের সব যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। কিন্তু ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ারটেকার, ইটিজি টেকনিশিয়ান, ইসিজি, ইকো টেকনিশিয়ান, ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য কোনো জনবল নেই। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা অনেক যন্ত্র। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে এই হাসপাতালের জন্য ১২৮২টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। চার বছর পর মাত্র ১৬৫টি পদ সৃষ্টি হয়েছে। এত কম জনবল দিয়ে এত বড় হাসপাতাল পরিচালনা দুরহ ব্যাপার। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খোদা বলেন, করোনা রোগী ছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে। পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা, ইমারজেন্সি, সিসিইউ, আইসিইউ, ডায়ালাইসিস, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনিসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইউনিট ছাড়া বাকি ইউনিট এখনো চালু করা যায়নি। এছাড়া অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি পড়ে আছে শুধুমাত্র চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আশা করছি দ্রুত এই সংকট নিরসন হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সিনিয়র, জুনিয়র এবং সহকারী সার্জনসহ মোট ৯৯টি চিকিৎসক কর্মকর্তার পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৬ জন চিকিৎসক। তবে নার্সের কোনো সংকট নেই। এছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারীর শূন্য পদ ৭৬ জন। আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন মাত্র ৭৬ জন। এত অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে এত বড় হাসপাতালে সেবা দিতে রীতিমতো হিমসীম খেতে হচ্ছে আমাদের। এর মধ্যেও গত বছর জরুরী বিভাগ চালু করা হয়েছে। কিন্তু বার্ন ইউনিট, ক্যান্সার ইউনিট, নিউরো মেডিসিন নিউরো সার্জারি, সাইক্যাটরি ইউনিট শুধুমাত্র জনবল না থাকায় চালু করা যায়নি।

Please follow and like us:

Check Also

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যাহা কিছু করার প্রয়োজন তাই করা হবে: সাতক্ষীরায় নির্বাচন কমিশনার

শাহ জাহান আলী মিটন,  সাতক্ষীরা: নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেছেন, নির্বাচন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।