সাতক্ষীরায় সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২১ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

আগেই প্রার্থী নির্বাচনের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত!
শ্যামনগর প্রতিনিধি: শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চাকুরী প্রত্যাশীদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত প্রার্থীদের অংশগ্রহণে পরীক্ষা নেয়ার কার্যক্রমও শুরু হয়। তবে মাঝপথে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিতরা পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে শ্যামনগর উপজেলা সদরের নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। পরীক্ষার আগেই তিনটি পদের বিপরীতে নিয়োগ দেয়ার জন্য তিনজনের নিকট থেকে ২১ লাখ টাকা গ্রহন সংক্রান্ত অভিযোগের সুত্রধরে পরীক্ষা বন্ধ করা হয় বলে জানা গেছে। মাথাপিছু ৭ লাখ করে টাকা নিয়ে পূর্বেই তিনজনকে নিয়োগ দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে আছে- মর্মে এক প্রার্থী ১১ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করে।

উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং আয়া-এ তিন পদের জন্য লিখিত আবেদনকারী২২ প্রার্থীকেশুক্রবারের পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়।এর আগে যাচাই বাছাই শেষে নিরাপত্তা কর্মী পদে ৬ জন এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পদে পরীক্ষার জন্য যথাক্রমে ৮ জন করে মোট ১৬ জনকেমনোনীত করে কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে নির্ধারিত হয়ে যায় তিনটি পদের বিপরীতে কারা উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। মুলত আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নিয়ে কতৃপক্ষ আগেভাগে নির্বাচন করে নেয় পছন্দের তিন প্রার্থীকে। প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তপন মন্ডল উত্তীর্ণ হতে যাওয়া তিন প্রার্থীর নিকট থেকে মোট ২১ লাখ টাকা গ্রহণ করে বলেও অভিযোগ ওঠে।

এসব পদে চাকরির জন্য আবেদনকারী কয়েকজন জানায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগের দিন ঘটনাচক্রে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী চুড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। এসময় পরচ্ছন্নতা পদে চাকরির জন্য আবেদনকারী সুজল পাইক ঘটনার তদন্তসহ পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ জানায়। লিখিত অভিযোগে সুজল দাবি করেন শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরীক্ষা কেবলই নিয়ম রক্ষার। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আগেই টাকা বুঝে পেয়ে যথাক্রমে শশাঙ্ক মন্ডল, দেবব্রত মন্ডল ও ইতি মন্ডল নামের তিনজনকে ঐ তিনটি পদে চাকুরী দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে।

জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে পূর্বেই প্রার্থী চুড়ান্ত করার বিষয়ে অভিযোগ উঠলেও বিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ তাতে গুরুত্ব দেয়নি। বরং তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নেয় এবং শুক্রবার পরীক্ষা শুরু করে। তবে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে পৌছে পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানায়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে পাঁচ লাখ করে টাকার বিনিময়ে অপর তিনজনকে ঐসব পদের জন্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে নুতনভাবে মনোনীত তিন প্রার্থীর পরিবারপুর্বের চুক্তির তুলনায় দুই লাখ করে টাকা বেশি দিতে সম্মত হওয়াতে কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তে নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।

আবেদনকারী কয়েকজনের অভিযোগ টাকা লেনদেনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় কতৃপক্ষ তড়িঘড়ি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১০ নভেম্বর আবেদনকারীদের হাতে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অনুমতিপত্র পৌছে দিয়ে ‘রিসিভ’ খাতায় ২ নভেম্বর উল্লেখ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় কুমার মন্ডলের মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি। ডিসি স্যারের নির্দেশে জেলা মাধ্যমিক অফিসারের প্রতিনিধি এসে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে গেছে। টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সভাপতির সাথে কথা বললে তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দিবেন’।
তবে সভাপতি তপন মন্ডলের মুটোফোনে একাধিকবাররিং দেওয়া সত্ত্বেও তিনি তা গ্রহণ করেনি। এক পর্যায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিনি মুটোফোন বন্ধ করে দেন।
সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দল্লাহ আল মামুন জানান ডিসি স্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তারপর আমরা নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছি।

Please follow and like us:

Check Also

এক নারীতে ধরাশায়ী ৩ চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেতা

বরগুনার তালতলীতে এক নারীতে ধরাশায়ী হয়েছেন তিন চেয়ারম্যান ও এক ছাত্রলীগ নেতা। আলোচিত আপত্তিকর ভিডিওর ঘটনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।