আজ আবার ‘র‍্যানসমওয়্যারের’ হামলা!

ক্রাইমবার্তা রিপোট:শুক্রবার বিশ্বের অন্তত ১৫০টি দেশের ২ লাখেরও বেশি কম্পিউটার একযোগে সাইবার হামলার শিকার হয়৷ আজ সোমবার ফের আরো বড় ধরনের হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করে দিলেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা৷ ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ‘ম্যালওয়্যার টেক’ রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “র‍্যানসমওয়্যার আবার ফিরে আসবে, সম্ভবত সোমবার৷” শুক্রবার ওই ভাইরাসের হামলায় ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার বহু দেশ নজিরবিহীন সাইবার হানার শিকার হয়৷

 

 

বড় রকমের সমস্যা দেখা দেয় ভারতের অজস্র সিস্টেমেও৷ যদিও সারা বিশ্বকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় উদ্বেগে রেখে শনিবার রাতে ওই ম্যালওয়্যারকে আপাতত আটকে দেয়ার জন্য ‘কিল সুইচ’ খুঁজে পান বিশেষজ্ঞরা৷ তবে তাতেই যে শঙ্কা পুরোপুরি মিটছে এমন দাবি করছেন না তারা৷ গোটা বিশ্বকে একসঙ্গে বেঁধে রেখেছে সাইবার কানেকশন৷ তাই সাইবার ‘মহামারী’ দেখা দেওয়ায় গোটা বিশ্বেই বিপদ ছড়িয়ে পড়েছে৷ হানা দিয়েছে এক বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার৷ যতক্ষণ না চাহিদামতো অর্থ দেওয়া না হচ্ছে, আক্রান্ত কম্পিউটারে হাত দেওয়া যাচ্ছে না৷ অনেক ক্ষেত্রে ‘ডেটা’, ‘এনক্রিপশন’ নিমেষে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরাও সমস্যা মেটাতে গিয়ে জেরবার৷ তাই সাইবার দুনিয়ার এই ম্যালওয়্যারকে ‘র‍্যানসমওয়্যার’ নামেই চিহিত করে গোটা বিশ্ব৷

প্রায় একশোটি দেশে ‘র‍্যানসমওয়্যার’ দিয়ে হামলা চালায় এক দল হ্যাকার৷ অকেজো হয়ে যায় কোটি কোটি যন্ত্র৷ বিনিময়ে চাওয়া হচ্ছে বিশাল অঙ্কের অর্থ৷ আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) কিছু ‘সাইবার অস্ত্র’ কয়েকদিন আগে চুরি হয়েছিল৷ তা দিয়েই এই হামলা চালানো হয়৷ অকেজো হয়ে যায় অজস্র কম্পিউটার৷
এনএসএ নজরদারির কাজে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করত, তার গলদ খুঁজে বের করেছে হ্যাকাররা৷ গত বছর ওই গলদ ধরা পড়ে৷ চলতি বছরের মার্চে মাইক্রোসফট সমস্যার সমাধান করলেও ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল৷ নিজেদের ‘শ্যাডো ব্রোকার’ বলে পরিচয় দিয়ে একদল হ্যাকার এপ্রিলে সেই সফটওয়্যার অনলাইনে ফাঁস করে দেয়৷ তারাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

শুক্রবার প্রথমে সুইডেনে এই ম্যালওয়্যার লক্ষ করা যায়৷ কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে৷ কেউ বলছে ৭৫ হাজার, কারও মতে এক লাখ সিস্টেম এর ফলে আক্রান্ত হয়েছে৷ অ্যান্টিভাইরাস প্রস্তুতকারী সংস্থা ক্যাসপারস্কাই ল্যাবের নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষকরা জানিয়েছেন, অন্তত ৯৯টি দেশ এই হামলার শিকার৷ ভারত, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক, স্পেনের টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা টেলেফ-নিকা, ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, ইউক্রেন, চিন, ইতালি, মিশর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত৷ ব্রিটেনের বহু হাসপাতাল ও ক্লিনিক রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়৷ আক্রান্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রথমসারির গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা৷ তিনশো মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের ‘ক্রিপটোকারেন্সি’ বিটকয়েন না দিলে কম্পিউটার ‘লক’ হয়ে থাকছে৷
এই বিষয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেন, “এটা একটা আন্তর্জাতিক হামলার অংশ৷ শুধু ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস নয়, বিশ্বের বহু দেশের নানা সংস্থা র‍্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত৷ আমাদের বিশেষজ্ঞরা সমস্যা মেটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন৷” জরুরি না হলে রোগীদের হাসপাতালে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে৷ জরুরিকালীন অস্ত্রোপচারের জন্য নথিভুক্ত রোগীদের যে সব হাসপাতালে সাইবার হানা হয়নি, সেখানে পাঠানো হচ্ছে৷ তবে রোগীদের তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে কি না, সে বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার নিশ্চিত নয়৷ দেশের সমস্ত সংস্থাকে সফটওয়্যার আধুনিকীকরণ করতে বলেছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রসচিব অ্যাম্বার রুড৷ সফটওয়্যারের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে অতীতে এভাবেই বিভিন্ন দেশে চরবৃত্তি চালাত আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি৷ স্বাভাবিকভাবেই সাইবার হামলার পর তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে৷ এনএসএ-কেই এর জন্য দায়ী করেছন সিআইএ-র সাবেক কর্মী ও সিস্টেম বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড স্নে্াডেন৷ তাঁর দাবি, “বারবার সতর্ক করার পরও তারা এই ধরনের সফটওয়্যার বানিয়েছিল৷ এবার সেই অস্ত্র বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে৷” আবার অনেক বিশেষজ্ঞই তাদের দায়ী করতে রাজি নন৷ তাদের মত, যথাসময়েই বিষয়টি মাইক্রোসফটকে জানানো হয়েছিল৷ মাইক্রোসফট বলেছে, ওই সংস্থার ফ্রি-অ্যান্টি ভাইরাস ব্যবহার করলে ও উইন্ডোজ আপডেট ‘এনাবেল’ করলে কম্পিউটার সুরক্ষিত থাকবে৷

আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দফতর জানিয়েছে, তথ্য ও কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে তারা সমস্ত দেশকে এ বিষয়ে সাহায্য করবে৷ আমেরিকার ভাবনাচিন্তায় গলদ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বহু সাইবার বিশেষজ্ঞ৷ তাদের দাবি, আক্রমণ নয়, সাইবার প্রতিরক্ষায় বেশি জোর দেয়া উচিত ছিল৷ তা না হওয়ায় ইন্টারনেটের নিরাপত্তা কমজোরি হয়ে পড়েছে৷ আক্রমণের ধাক্কা পড়েছে ডি সেভেন শীর্ষ বৈঠকেও৷ অনেকেই মনে করছেন, এটা ‘ওয়েক আপ কল’৷ অবিলম্বে সতর্ক হতে হবে৷ জি সেভেন-ভুক্ত দেশগুলির অর্থমন্ত্রীরা সাইবার অপরাধ দমন ও নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন৷ বিশেষত বিশ্বব্যাপী ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা, শেয়ার মার্কেটের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি বলেও তাদের ধারণা৷

 

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার,হোটেল রেস্তোরা ও বেকারি শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

সাতক্ষীরায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ১১তম বছর পূর্তি উপলক্ষে র‌্যালি, কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।