সাতক্ষীরায় নারী শ্রমিকের কর্মপরিধিবেড়েছে, বাড়েনি পারিশ্রমিকসংবাদদাতা : সাতক্ষীরার অবহেলিত উপজেলা আশাশুনি। আশাশুনিতে আদি কাল থেকে নারীরা কৃষি কাজের সূচনা করেছিল। সেই নারীরা আজো স¤পৃক্ত আছে কৃষি কাজের সাথে। কেবল কৃষি কাজই নয় দিনের পর দিন বেড়েছে নারী শ্রমিকদের কর্ম পরিধি কিন্তু বাড়েনি তাদের পারিশ্রমিক। নানান অবহেলায়, পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে না থেকে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদেই নারীরা বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। আশাশুনি  এলাকার নারীরা ধান রোয়া, পাতা সারা, সার ছিটানো, চারা রোপণ, আগাছা নিড়ানি, পাটের বীজ ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, গম, সরিষা মারাই ও  কাটাসহ প্রভৃতি কাজও করছেন। তবে শ্রম দিলেও শ্রমের নায্য মজুরি না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তাদের।
কথা হয় উপজেলার বুধহাটা  ইউনিয়নের  নওয়াপাড়া গ্রামের নারী শ্রমিক নার্গিস এর সাথে তিনি জানান, সারাদিন ধানের পাতা সেরে (তোলা) ১৪০ টাকা ২০০ টাকা পাই। একজনের (স্বামী) কামাই দিয়া সংসার চলা খুব কষ্ট হয়।’ তাই অভাবের সংসারে টাকা দেই। তার স্বামী  একজন কৃষি শ্রমিক। তার সাথে কথা বুধহাটা ব্রাক অফিসের পাশে ধানের পাতা সারার সময়।তার সাথে ফতেমা,মর্জিনা,সাজেদা ও কাছ করছিল। স্বামীর উপার্জনের ওপর নির্ভর করতে হলেও বিভিন্ন সময় নিজেও উপার্জনে জড়িত হন। তিনি ধানের চারা রোপণ, আগাছা নিড়ানি, পাটের বীজ ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, গম,সরিষা  কাটাসহ প্রভৃতি কাজও করেন। তবে শ্রম দিলেও শ্রমের নায্য মজুরি না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তার। অভিযোগ করে তিনি বলেন, একজন পুরুষ যতটুকু সময় দেয়, আমরা নারীরাও ততটুকু সময় দিই। পুরুষ ২৫০টাকা থেকে ৩০০ টাকা পেলেও আমরা নারীরা পাই ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কাজ কম করি না বলে মন্তব্য করেন নারী শ্রমিক ফতেমা। তার মতো আক্ষেপ করেন স্বাপ্না, কাকুলি, আনোয়ারা, রানীও। নার্গিস, ফতেমা, মর্জিনা, সাজেদা   মালতি  রানীর মতো শত শত নারীর কর্মব্যস্ততা চোখে পড়বে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শে^তপুর, বৈউলা, মহিষাডা্গংা, কাদাকাটিসহ  বিভিন্ন এলাকায়। দল বেঁধে ১০-১৫ জনের গ্রুপ হয়ে ইরি  মৌসুমে পাতাসারা ও রোয়ার  কাজ করছেন তারা। বুধহাটা ইউনিয়নের ফতেমা ওই নারী শ্রমিকের স্বামী মারা গেছেন। বর্তমানে চারজনের সংসারে ছেলের উপার্জনের সঙ্গে নিজের অর্থও যুক্ত করেন পরিবারে। ধান চাষী  নিলুদাস জানান, ‘পুরুষ শ্রমিকরা বিভিন্ন এলাকায় যায় কাজ করতে। কাছাকাছি থাকে না। মহিলাগুলো যে কোন সময় কাজের জন্য পাওয়া যায়। তাদের ১৫০-২০০ টাকা করে হাজিরা দেই।’ তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ধানের বাজার খারাপ।  মুজরি দিয়ে তেমন লাভ হয় না। ৪ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ করেছি। কি রকম লাভ হবে বুঝতে পারছি না।’ তবে নারী শ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলক কম দেওয়া হয় বলেও স্বীকার করেন তিনি।
মানবাধিকার কর্মী নারী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন এমন এক ব্যক্তি জানান, যাদের ঘর্মাক্ত শরীর আর বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটায় তিল তিল করে গড়ে ওঠে মালিকের সম্পাদের পাহাড়, সেই শ্রমিকদের দুরাবস্থার কথা যেন শোনার কেউ নেই। এ অঞ্চলের নারীরা অনেক কর্মঠ। শ্রম দেন। কিন্তু সঠিক মজুরি পান না। এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছি আমরা। এজন্য মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষকে সচেতন হওয়া দরকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক নারী শ্রমিক টাকা না নিলেও টাকার পরিবর্তে ধানের খড় নিয়ে যান। কারণ হিসেবে বাড়িতে তারা গবাদি পশুর খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন।আশাশুনি উপজেলা তাঁতিলীগের সভাপতি স,ম সেলিম রেজা সেলিম বলেন নারী শ্রমিকদের শ্রম আমাদের অর্থনিতীর উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে।তাদের এই অবদান অস্বীকার করলে চলবে না।আমাদের কে তাদের মৌলিক অধিকার গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা উচিত।
Please follow and like us:

Check Also

বৃষ্টি কামনায় সাতক্ষীরায় ইসতিস্কার নামাজ

স্টাফরিপোটারঃ চলমান তাপ্রবাহ থেকে রক্ষা এবং রহমতের বৃষ্টির জন্য সাতক্ষীরায় ইসতিস্কার নামাজ আদায় করা হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।