আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ:আন্তুর্জাতিক নারী দিবস ও সাংবাদিকতা

আমিনা বিলকিস ময়না

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। আজ নারীদের এগিয়ে চলার ও আত্মপ্রত্যয়ের এক মহান দিন। এ দিন মেয়ে মানুষ নয় মানুষের জন্য একটি বড় ধরনের দিন।নারীকে মেয়ে মানুষ বানানোর মতলববাজদের রুখে দেয়ার দিন। সভা সমিতিতে ঘটা করে বলা হচ্ছে নারীরা আজ আকাশে উড়ছে, পানিতে ভাসছে। এটাই কেন জানি না নারীকে খাটো করে উপস্থাপন করার বিশেষ কৌশল। এসব কৌশল নারীর অগ্রগতিকে বেশ খানিকটা পিছিয়েই দেয়। আজ সাংবাদিকতায় নারীরা আছে। এগিয়েও চলছে। কিন্তু তাদের পথচলা খুব সুখকর নয়। বেশ সংকটপূর্ণ ও কঠিন। সাংবাদিকতায় পুরুষ সাংবাদিকতা বা নারী সাংবাদিকতা নেই। কিন্তু নারীদের লেখালিখিকে আলাদা করে নারী সাংবাদিকতা বলে চালানোর এক অপপ্রয়াস লক্ষ্যনীয়। বাংলাদেশে বিগত শতাব্দীর ষাট এর দশক থেকে নারীরা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করা শুরু করেন। প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’ এর সম্পাদনা শুরু করেন বেগম সুফিয়া কামাল। পরে নুরজাহান বেগম এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। অবশ্য সে সময় নারীরা সাংবাদিকতায় আসতেন কেবলমাত্র আগ্রহ থেকে এবং সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এ পেশাতে জড়িত হচ্ছেন অনেক নারী। দেশে এবং দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত বাংলাদেশের অনেক নারীই মেধা ও সাহসিকতার সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আছেন। প্রমাণ করতে চলেছেন যে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নারী সাংবাদিকরাও একটি যুগান্তকারী অবদান রাখতে পারেন। সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। তা আবার নারীদের জন্য। যুগ যুগ থেকে লালন করা আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় একজন নারী সাংবাদিকতায় এসে কতটা স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারছেন, তা নিতান্তই প্রশ্নবিদ্ধ। সমাজে বিরাজমান নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলেছে নারী আবার বেড়ে চলেছে নারী বৈষম্যও। সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত নারীদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।

 

আমরা সমতাভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রের কথা বলছি কিন্তু প্রিন্ট, অনলাইন, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে এখন পর্যন্ত যারা বড় বড় পদে আছেন তাদের খুব কম অংশই নারী। বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদনাতে নারীদের উপস্থিতি অপ্রতুল। অথচ নারীদের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এই ক্ষেত্রটিতে একটা মহাজাগরণ তৈরি করা যেতে পারে। বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আকর্ষণীয় একটি পেশা বলে ইতিমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিযোগিতার এই যুগে গণমাধ্যমগুলোর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবার আগে সংবাদ পৌঁছে দেয়া। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো এই কাজটা বেশ সফলতার সঙ্গেই করছে। আর এই সফলতার পিছনে পুরুষের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জের ভাগিদার হচ্ছেন নারীরাও। অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে সাংবাদিকতাতেও মেয়েরা নিজেদের জায়গা করে নিতে সামর্থ্য হয়েছেন। সাংবাদিকতাতেও যে নারীরা দিনে দিনে অনেক এগিয়ে চলেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে নারীদের হয়ে এই পেশায় সবচেয়ে যুগান্তকারী সাফল্য এনেছেন ক্যাথরিন ভাইনার। তিনি হতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পুরাতন পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এর সম্পাদক। শুধু তাই নয়, ভাইনার গার্ডিয়ানের ১৯৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী সম্পাদক! এই মুহূর্তে তিনি একই পত্রিকার উপ-সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্র সংস্করণ ‘গার্ডিয়ান ইউএস’-এর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। শুধু ক্যাথরিন ভাইনারই নন। সারা পৃথিবীতে এমন অনেক নারী সাংবাদিক রয়েছেন যারা নিজেদের কাজ দিয়েই উজ্জ্বল করেছেন সব নারীর ইমেজ। তাদের সাহসী লেখনি আর চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা দেখে পুরুষদেরও ঈর্ষার কারণ। তাদের কাজ দেখেই আজকের নারীরা এই পেশাতে আসার উৎসাহ পায়।

 

সাংবাদিকতার বর্তমান সময়টাতে বাংলাদেশে নারী পুরুষ সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিযোগিতার সাথে। বিশেষ করে টেলিভিশন সাংবাদিকতায় সংবাদ উপস্থাপক, বিশ্লেষক, রিপোর্টার, সঞ্চালক ইত্যাদি কাজে দিনে দিনে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েই চলেছে। সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো, এই পেশাতে নারীদের সাফল্যটাও গর্ব করার মতোই। পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন পত্রিকা অথবা এফএম রেডিও- সবখানেই নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। প্রধানমন্ত্রী বিট, পার্লামেন্ট বিট, ক্রাইম বিট এবং খেলাধুলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতেও বাংলাদেশের নারীরা ভালো করছেন। শুধু কি তাই, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রেও নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। পুঁথিগত বিদ্যা আর অভিজ্ঞতা যাই বলা হোক। নারীরা পিছিয়ে নেই। সেটা শুধু সাংবাদিকতায় নয়, বরং সব ক্ষেত্রেই। দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে নারী সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে, সেটা বুঝতে বোদ্ধা হতে হয় না। কিন্তু সংকট যা রয়েছে তাও কম না। আজ নারী দিবস। আজকেও নারীরা যে যথেষ্ঠ সহযোগিতা পেয়ে এগিয়ে যেতে পারছে সেটা বুকে হাত দিয়ে বলা যাবে না। বহু নারী আছেন যারা যথেষ্ঠ গুণী অথচ নারী বলেই যথাযথ জায়গা মর্যাদা পান না। এমনও শোনা যায় ঊর্ধ্বতনরা গুনের চাইতে সৌন্দর্য্যকেই অধিকতর গুরুত্ব দিতে চান। নারীদের এই দুর্গম পথচলায় কথা ছিল সবার সহযোগিতা পাওয়া যাবে। কিন্তু দূর্ভাগ্য তা হলো না। তবে আজ হোক, কাল হোক আর পরশু হোক বাংলাদেশে নারীদের সাংবাদিকতায় যে অগ্রযাত্রা তা কেউই রোধ করতে পারবে না। প্রয়োজনে আট মার্চের চেতনা বাংলাদেশের নারী সমাজ ঘুরে দাঁড়াবে। তার প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার আদায় করে নেবে। লেখক: সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব।

Please follow and like us:

Check Also

বাবা-মায়ের ঝগড়া থামাতে থানায় ৬ বছরের শিশু

 খুব সাধারণ বিষয় নিয়ে মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত এবং সেটা নিয়মিত। ছয় বছরের শিশুর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।