সাতক্ষীরায় ৫ লক্ষ কৃষকের ঈদের অানন্দ নেইঃ অাম ও ধানের দাম না পেয়ে হতাশ তারা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ  সমাজে একটা কথা আছে। আমও গেলো ছালাও গেলো। আর আমি বলছি আম গেলো ধানও গেলো। কারণ বাকিতে আর ফাঁকিতে নাজেহাল সাতক্ষীরার কৃষক। তারা আম বিক্রি করেছেন বাকিতে। তাদের ধানও ফড়িয়ারা নিয়েছে বাকিতে। এরই মধ্যে ঈদ এলো। কিভাবে কাটলো তাদের ঈদ একখা কেবল তারাই জানেন। এক চাষী আমাকে বললেন আমার প্রচুর ধান হয়েছে এবার। এ যেনো অঢেল ধান। কিন্তু ধানের দাম নেই। সরকার ধান কিনলেও আমরা সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রির সুযোগ পেলাম না। দালাল ও ফড়িয়ারা এসেছে আমাদের কাছে। দাম বলেছে কম। শেষ পর্যন্ত কম দামে ধান দিয়েও দিয়েছি। কিন্তু ফড়িয়া সামান্য কিছু টাকা ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেছে। ঈদে আর টাকা দেয়নি। বলে বাজার মন্দা । বিক্রি করতে পারছি না। ঈদের পরে দেখবো। এই কৃষক এখন টাকার জন্য এ ঘাট ও ঘাট করছেন। তার আফসোস আমার ধান আমার গলার কাঁটা। আমি কিভাবে পরের মওসুমে ধান চাষ করবো। ধান চাষ করে আমার লাভই বা কি। কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। তিনি বলেন আমার বাকি আমার ফাঁকি। সাতক্ষীরায় এ বছর ধান জন্মেছে প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। এই ধানের ভবিষ্যত কী । তা জানতে চেয়েছেন কৃষকরা। এই ধান জন্মাতে যে অর্থ ও শ্রম দিতে হয়েছে তার অর্ধেকও কৃষকের হাতে ওঠেনি। এখন মহাজনকে কি দেবো। নিজে কি খাবো একথা বলছেন কৃষক। সাতক্ষীরা জেলায় চার লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে এবার। এর মধ্যে মাত্র ২২৯১ টন ধান সরকারিভাবে ক্রয়ের কথা। আমার কথা ধান চাষীদের প্রলাদনা দিতে হবে। কালের ঐতিহ্য বাংলাদেশের পাট সোনালী আঁশ যেনো কৃষকের গলার ফাঁস না হয়ে দাঁড়ায়।
সাতক্ষীরায় এবার যেনো পাল্লা দিয়ে জন্মেছে আম। অঢেল আম। কিন্তু আমে এবার আয় দেয়নি। পবিত্র রমজানে আমের চাহিদা কমে যায়। রোজাদাররা দিন শেষে কতটুকু আমই বা খেয়েছেন। তা ছাড়া আম যখন পাকেনি তখনই আসে ফণীর আঘাত। কয়েক দিন পর আরও দু’টি ঝড় হানা দিয়েছে সাতক্ষীরায় । প্রথমে পাকলো গোপালভোগ গোবিন্দভোগ জাতের আম। কিন্ত দামে কম। পাইকাররা বাজারে আম এনে বিপাকে পড়েছেন। কম টাকায় বেচা বিক্রি সেরে চলে গেছেন তারা। বাজারে কিছুটা সময় আম শুন্যতা দেখা দেয়। এর পর পাকতে থাকে হিমসাগর। এ আম না পাকতেই চাষীরা অবস্থা বিবেচনায় আগাম বিক্রি করে দিতে থাকেন। বাজারে খুব কম দাম কাঁচা পাকা হিমসাগরের। এমনিতে চাহিদা কম। ফলে দামও কম। চাষীরা আম বিক্রি করে কাংখিত টাকা পেতে পারেন নি। তারা বড় আশা করে রফতানির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু মধ্যস্বত্ত্বভোগী কয়েকটি এনজিও শেষ পর্যন্ত সেই আম আর নিতে আসেনি। চাষীরা তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত কম দামে আম বিক্রি করে নিজেদের ক্ষতিই করেছেন তারা । বাজারে কিছু আম ছেড়েছেন তারা বাকিতে । এই দাম তারা পাবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে আমচাষীদের। এবার জেলার ৫ হাজার ৩ শ’ আম বাগানের ৪১ শ’ হেকটর জমিতে ৫০ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। এর মধ্যে মাত্র দুই শ’ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানির কথা। বাস্তবে রফতানি হয়েছে মাত্র কয়েক টন। ২০১৪ সালে সাতক্ষীরাকে স্থানীয়ভাবে ম্যাংগো ক্যাপিটাল ঘোষনা করা হয়েছিল। সাতক্ষীরার হিমসাগর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আম হিসাবে স্বীকৃতিও পেয়েছিল। এই ধারা বজায় রাখতে কৃষক কিন্তু কম করেনি। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনে প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য। তারা আমে দাম পেলেন না। আমও গেল বাকিতে। পর্যাপ্ত আম গেলো না রফতানিতেও। কি হবে ভবিষ্যতের আমচাষ। সব মিলিয়ে চাষীদের মাথায় হাত উঠেছে। তাদের ধান আম দুই গেছে বাকিতে আর ফাঁকিতে।

— সুভাষ চৌধুরী সাতক্ষীরা করেসপন্ডেন্ট,দৈনিক যুগান্তর ও এনটিভি

Please follow and like us:

Check Also

আশাশুনিতে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আশাশুনি প্রতিনিধি।। আশাশুনিতে ১লা মে-২৪ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন আশাশুনি উপজেলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।