কপোতাক্ষ পাড়ের জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ পেশা হারিয়ে বেকার

নিজস্ব প্রতিনিধি: মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত দুগ্ধ ¯্রােতরূপী কপোতাক্ষ নদে এখন তার পাল তোলা নৌকা চলে না। প্রথম পর্যায়ে কপোতাক্ষ খনন প্রকল্প শেষ হলেও ফিরতে পারিনি জেলে সম্প্রদায় তাদের পেশায়।
এক সময় এ নদের উত্তল তরঙ্গ ভরা যৌবন ছিল। নদের বুক চিরে চলাচল করত বড় বড় নৌকা, লঞ্চ, কার্গো, জাহাজ। কালের আবর্তে নতুন প্রজন্মের কাছে কপোতাক্ষ এখন শুধুই ইতিহাস। গড়ে উঠেছে কপোতাক্ষের দু’পাশে অবৈধ দখলের মহাউৎসব। পলি জমে নদের পানি শূণ্য হয়ে পড়ায় এ অঞ্চলে প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ ইতিমধ্যেই হারিয়ে গেছে। ফলে জেলে সম্প্রদায়ের হাজারও মানুষ পেশা হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার সর্বশান্ত হয়ে কর্মসংস্থানের জন্য এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। অনেকে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছর গুলোতে জলবায়ূ পরিবর্তন তথা সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কপোতাক্ষ নদে তার প্রভাব পড়েছে। ¯্রােতহীন হয়ে পড়ায় বর্ষায় নদের বুকে জমা হওয়া পলি অপসারিত হয় না। ফলে প্রতি বছর জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট ছোট চর। সাথে সাথে চলছে চর দখলের হিড়িক। আর এতে নদ হারিয়ে ফেলছে তার নাব্যতা।
অববাহিকা অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ভাল হওয়ায় ব্রিটিশ আমলেই এখানে গড়ে উঠে কয়েকটি বাণিজ্য কেন্দ্র। নদী পথে কম খরচে সহজে পণ্য পরিবহনের সুবিধা থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি এ অঞ্চলের গড়ে ওঠে ছোট ছোট কুটির শিল্প। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে এ সব শিল্প কারখানা প্রায় ধ্বংসের পথে। কপোতাক্ষ আজ নামে নদ থাকলেও বাস্তবে একটা ডিঙ্গি নৌকাও দেখা যায় না।
সরেজমিনে তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গেলে দেখা গেছে, কপোতাক্ষের দু’ধারে অবৈধ স্থাপনা, দখল বাজ গড়ে ওঠায় কপোতাক্ষের নদ সংকুচিত হয়ে গেছে। সরকার বিভিন্ন সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কথা বললেও কার্যত কাজে আসছে না। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কপোতাক্ষ অববাহিকার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়তো কিন্তু কপোতাক্ষ খনন হওয়ায় এখন নামমাত্র কয়েকটি গ্রাম বন্যায় কবলিত থাকে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
সরকার কপোতাক্ষ নদ খননে ২৬২কোটি টাকা বরাদ্দ কাজ প্রথম পর্যায়ে শেষ হয়েছে। এদিকে কপোতাক্ষ পাড়ের হাজারও মানুষ দুঃশ্চিন্তায় দিনযাপন করছে। বর্ষা মৌসুমে কপোতাক্ষ অববাহিকার তালা পাটকেলঘাটার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয় তার একমাত্র কারন নেই কোন পানি নিস্কাশনে জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষের মাঝে চলছে আতঙ্ক। কপোতাক্ষ নদের সাথে সকল সংযোগ খাল বন্দ হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে একটু বৃষ্টিতেই এরূপ চিত্র দেখা যায় উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায়।

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার,হোটেল রেস্তোরা ও বেকারি শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

সাতক্ষীরায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ১১তম বছর পূর্তি উপলক্ষে র‌্যালি, কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।