করোনাজয়ীদের প্লাজমায় আক্রান্তদের দেহের ‘৯৯% ভাইরাস মারা যায়’

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:   করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অনেক দেশে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ব্লাড প্লাজমা থেরাপি। আবার অনেক দেশে তা শুরু হওয়ার অপেক্ষায়। যদিও এটি এখনও করোনাভাইরাস চিকিৎসায় শতভাগ কার্যকরী কোনো পদ্ধতি নয়। তবে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক একটি সুখবর দিয়েছেন। তারা বলেছেন, করোনাজয়ীদের প্লাজমায় আক্রান্তদের দেহে থাকা ৯৯ শতাংশ ভাইরাস মারা যায়।

শুক্রবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইভান হাং ফ্যান-এনগাই ওই গবেষণা দলটির নেতৃত্ব দেন। অধ্যাপক ইভান জানান, ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে করোনাজয়ীদের রক্তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সে কারণেই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হলে তার শরীরের ৯৯ শতাংশ ভাইরাসই মারা যায়।

রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলা হয়। তিন ধরনের কণিকা ছাড়া রক্তের বাকি অংশই প্লাজমা বা রক্তরস। মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে রক্তের প্রায় ৫৫ শতাংশ রক্তরস থাকে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই ভাইরাস মোকাবিলা করে টিকে থাকতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে আক্রমণ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লাজমা বা রক্তরসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডিই অন্য রোগীদের সুস্থ করার কাজে ব্যবহার করা হয়।

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উহানেও প্লাজমা থেরাপিতে সাফল্য মিলেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১০ ব্যক্তিকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার পর আশাব্যাঞ্জক ফল মেলে। এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই রোগীরা প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠেন।

অধ্যাপক ইভান জানান, গত সপ্তাহে হংকংয়ে এক সংকটাপন্ন করোনা আক্রান্তকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়। এরপরই দ্রুত তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করে আনা হয়।

হংকং রেড ক্রসের পক্ষ থেকে করোনাজয়ীদের রক্ত দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ এই চিকিৎসায় রোগীর অবস্থা দ্রুত উন্নতি হয়। হংকং প্লাজমা থেরাপিতে যুক্ত রয়েছেন ডা. লি চেউক-কওং। তিনি জানান, প্লাজমা থেরাপিতে নাটকীয় সফলতা মিলছে। তবে এখনও পর্যন্ত খুব বেশি মানুষ রক্ত দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

ডা. লি জানান, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের রক্ত প্লাজমা থেরাপির জন্য বেশি উপযোগী। এক্ষেত্রে তাদের ওজন হতে হবে কমপক্ষে ৬০ কেজি এবং কোনো ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকা চলবে না। তবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্লাজমা নেওয়া হচ্ছে না। কারণ তাদের প্লাজমা করোনাভইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসের জন্য সমস্যাজনক হতে পারে।

হংকংয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫২ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯ জন।

Please follow and like us:

Check Also

চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা

অতি তীব্র তাপদাহের মধ্যে চলতি বছরে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।