মামলার এজাহারে যা বললেন পরীমনি

ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগ এনে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনি।

সোমবার সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে মামলার নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।

মামলার এজাহারে তিনি লিখেছেন, ‘নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৫০), অমিসহ (৪১) আরো চারজনের বিরুদ্ধে এ মর্মে এজাহার দায়ের করছি যে ৮ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় আমার বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি ও বনিসহ দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হই। পথে অমি বলে, বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি অনুরোধ করে, এখানে পরিবেশ সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো। আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর ১ নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১ নম্বর আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন।’

পরীমনি এজাহারে আরো লিখেছেন, ‘মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল ঢুকিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমি সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পাই। ১ নম্বর আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ১ নম্বর আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারে। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নম্বর আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে। এ সময় আমি ৯৯৯–এ কল করতে গেলে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়া হয়। ২ নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন ১ নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।’

এজাহারে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারব। প্রকাশ থাকে যে ২ নম্বর আসামি অমি পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাকে আমার বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায় এবং ২ নম্বর আসামি অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামির সহায়তায় ১ নম্বর আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। আনুমানিক রাত ৩টার সময় আমি আমার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় আমার সঙ্গীদের সাথে ফিরে আসি। আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে। ওই বিষয়ে আমি আমার পরিবার, শিল্পী সমিতি ও অন্যদের সাথে আলোচনা করায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।’

পরীমনি রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলনে বারবারই বলছিলেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। তার আশঙ্কা, তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। এসব বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন আলোচিত নায়িকা পরীমনি।

সংবাদ সম্মেলনের পুরোটা সময় পরীমনির বাসায় ছিলেন বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নূরে আজম মিয়া। সোমবার সকালে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘তিনি যেহেতু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, আমাদের দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাকে আমরা বিশেষ প্রহরায় রাখছি। তার বাসা ও আশপাশে পুলিশ আছে। তার নিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয়, তা-ই করা হচ্ছে।’

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার,হোটেল রেস্তোরা ও বেকারি শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

সাতক্ষীরায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ১১তম বছর পূর্তি উপলক্ষে র‌্যালি, কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।