৭১৪ রানের ম্যাচ

ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৩৩ রান। বিশ্বকাপে দু’দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৭১৪ রানও এসেছে এই ম্যাচে। বিশ্বকাপে প্রথম বারের মতো তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পেয়েছেন মুশফিকুর রহীম। মাহামুদুল্লাহ রিয়াদও স্বরূপে ফিরেছেন। এতো সব অর্জনের ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেটে ৩৮১ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে করে ৩৩৩।

ট্রেন্টব্রিজের এই মাঠেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৪৪ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিল ইংল্যান্ড, পরে সেটি ছাড়িয়ে ৪৮১ করেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু ছিল না এ দিনও।

তবে এমন উইকেটে নিয়ন্ত্রিত ও ধারাবাহিক বোলিং করা উচিত, সেটিও করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। অস্ট্রেলিয়া পেরেছে তাই তারা ম্যাচ জিতেছে। এক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া শ্রীলঙ্কার ৬৮৮ রান ছাড়িয়ে গেছে এই ম্যাচ। দু’দল মিলে তুলেছে ৭১৪ রান।

এদিন নটিংহ্যামে আসা টাইগারদের ভক্তদের কাছে ৩৮১ রানও যেন মামুলি মনে হচ্ছিল। ২৩ রানের সময় সৌম্য আউট হলেও তাদের কণ্ঠে একই চিৎকার ‘হবে, হবে সাকিব আছে হবে, তামিম আছে হবে, মুশফিক আছে হবে!’ বিশাল রানের পাহাড় তাড়া করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ লড়াই করেছে। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সব রেকর্ড ভেঙে আট উইকেটে বাংলাদেশ করেছে সর্বোচ্চ ৩৩৩ রান। এই বিশ্বকাপেই আফ্রিকার বিপক্ষে দলীয় ৩৩০ রান করেছিল টাইগাররা। ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করা সাকিব গতকাল ৪১ রানে ফিরলেও মুশফিকুর রহীম হাঁকিয়েছেন বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ১০২ রানে। তাইতো এমন হারের পরেও ইংল্যান্ড আর বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শকদের মধ্যে ছিল না হতাশার ছায়াঁ। মাঠ ছাড়ার আগে স্লোগান দিচ্ছেলেন কাপঁলো কারা? অস্ট্রেলিয়া’ অস্ট্রেলিয়া’।

সত্যি অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ হয়তো কপালের ঘাম মুছতে মুছতেই বের হয়েছেন মাঠ থেকে। ম্যাচ শেষে ধন্যবাদ দিয়েছেন ওয়ার্নারকে। আর মাশরাফি আক্ষেপ করেছেন ৪০-৫০ রান বেশি হওয়ার। অনেক প্রাপ্তির ম্যাচেও থেকে গেল আফসোস। কারণ এই ম্যাচ জিতলেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা জোরালো হতো বাংলাদেশের। আর এখন আফগানিস্তান ভারত ও পাকিস্তানকে হারাতে পারলেও আশায় থাকতে হতে প্রতিপক্ষের হারের।
টসে হেরে আগে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশের কোন নিয়মিত বোলার সফলতা এনে দিতে পারেননি। তাই বিশ্বকাপের আসরে প্রথমবারের মতো বল হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল সৌম্য সরকারের হাতে। প্রথম সাফল্য আসে তার হাত ধরেই। আগের ৪৮ ওয়ানডেতে ১ উইকেট নেওয়া সৌম্য এদিন নিয়েছেন ৩ উইকেট। মাঝের ওভারগুলোতে যেমন, এই ম্যাচের বাস্তবতায় স্লগ ওভারেও করেছেন দারুণ বোলিং। গত কিছুদিনে যাকে নিয়ে অনেক আলোচনা, সেই রুবেল হোসেন ৯ ওভারে গুনেছেন ৮৩ রান।

শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নারের ১৬৬ রানে ৫ উইকেটে ৩৮২ রানের চ্যালেঞ্জটা ছুড়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। এক কথায় নিরাপদই মনে হয়েছে তাদের। বিশেষ করে ১০ রান করে যখন সৌম্য আউট হন তখন অনেক সংবাদকর্মীও বলছিল ২৭০/২৮০ এর বেশ রান করা সম্ভব নয়। এবার তামিমকে নিয়ে ৭৯ রানের জুটি দলকে আবোরো পথ দেখালেন সাকিব। কিন্তু ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করা সাকিব গতকাল ৪১ রান করে আউট হয়ে ফিরেছেন। টানা ৫ ইনিংসে কমপক্ষে ৫০ তোলার পর গতকালই হাল ছাড়লেন তিনি। তখন দলের আশার প্রতীক তামিম-মুশফিকের জুটিতে আবারো আশার আলো দেখাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বাজে একটা শটে তামিম প্লেডঅন হয়ে ফিরেন ৬২ রান করে। বিশ্বকাপের এই আসরে এটি তার প্রথম ফিফটি। এরপর মুশফিক-লিটন জুটিতেও দল এগিয়ে যাচ্ছিল দারুণ ভাবে। কিন্তু এদিন লিটন দারুণ শুরুর পর থামলেন ২০ রানে। জাম্পার বলে হয়েছেন এলবিডাব্লিউ, রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি। তাতেই ভাঙ্গে ৩১ রানের জুটি। লিটন যখন আউট হন দলীয় রান ১৭৫। ঠিক একই ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল ১৬৩ রান। তবে পার্থক্য অজিরা তখন হারিয়েছির ১টি উইকেট। বাংলাদেশ হারায় ৪ উইকেট। এরপর মুশফিক শুরু করেন ভায়রা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে প্রতিরোধ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পর থেকে অফ ফর্মে থাকা মাহমুদুল্লাহ এদিন দারুণ ভাবে ঘুড়ে দাঁড়ান ৫০ বলে ৬৯ রান করে। তার এই ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ৩ ছয়ের মারে। আউট হওয়ার আগে গড়েছেন মুশফিকের সঙ্গে শতরানের জুটি, তাও ৮৩ বলে।

এই দু’জনের জুটিতে আসে ১২৭ রান। এরপর সাব্বিরের উপর ভরসা রেখেছিল দল। কিন্তু সেটি পুরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বিশ্বকাপের একাদশে প্রথম সুযোগ পাওয়া এই ব্যাটসম্যান। আউট হয়েছেন প্রথম বলেই। ৪৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৩০৪ রান। মুশফিকুর রহিম ৮৪ রানে সেঞ্চুরির অপেক্ষাতে। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে দারুণ খেলে ওয়ানডেতে তার সপ্তম সেঞ্চুরি দেখা পান বিশ্বকাপের ময়দানে। ৫৪ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করা মুশফিক ৯৫ বলে ১০০ রান স্পর্শ করেন। এই সময়ে তার ব্যাট থেকে আসে নয়টি চার ও একটি ছক্কা। ৪৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৩২৬ রান ৭ উইকেট হারিয়ে। ক্রিজে মুশফিকুর রহীমের সঙ্গী মাশরাফি বিন মুর্তজা। শেষ পর্যন্ত মাশরাফিও আউট আউট হলে থামে বাংরাদেশের পথচলা। তও হাতে দুই উইকেট

Please follow and like us:

Check Also

দীর্ঘ খরতার পর সাতক্ষীরায় শীতল বৃষ্টিতে স্বস্তির পরশ

অবশেষে অগ্নিস্নানের পর ধরণীতে নেমে এলো স্বস্তির বৃষ্টি। দীর্ঘদিন খরতায় পুড়ে শীতল বৃষ্টিতে ভিজলো মাটি। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।