সাতক্ষীরা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আব্দুল খালেকের ইন্তেকাল

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরা সদর আসনের সাবেক সাবেক এমপি ও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিনি গত চলতি ৭ জুলাই সাতক্ষীরা কারাগারে স্ট্রোক করলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সর্বশেষ খুলনা ২৫০ শর্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে প্রিজন বেডে ভর্তি করেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বৃহষ্পতিবার সন্ধা ৫টা ৫৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ ছেলে ৫ মেয়েসহ অসংখ্য নাতী-নাতনী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর খবরে সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।
মাওলানা আব্দুল খালেক বড় জামাই বর্তমান কুশখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল গফফর জানান, ২০১৫ সালে তার শ^শুরকে গ্রেফতারের পর ২০১৮ সালের ৫ মার্চ তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৪ মার্চ ২০২২ , বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্ত র্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা করেন। গ্রেফতারের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি জেলখানাতেই ছিলেন।
অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল এমনই একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে সাতক্ষীরার সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিত। তিনি সাতক্ষীরা বাসীর সুখে-দুঃখে, সুদিনে-দুর্দিনে সব সময় সাথে ছিলেন। সাতক্ষীরার উন্নয়নে তার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তিনি আরো জানান, তিনি শুধু সাতক্ষীরারই নেতা নন। তিনি একজন প্রবীণ জাতীয় নেতা। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তিনি বরাবরই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন।
মাওলানা আবদুল খালেক মন্ডল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সাতক্ষীরা সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি সাতক্ষীরা সদরের বৈকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মাওলানা আবদুল খালেক মন্ডল সাতক্ষীরা আগরদাড়ী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল একটি নাম, একটি ইতিহাস। আল্লাহ প্রদত্ত এক বিস্ময়কর প্রতিভা। ইসলামপ্রিয় জনগণের রুহানি উস্তাদ ও ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সাতক্ষীরা জেলার মাটি, আলো-বাতাস এবং মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে আছে তার জীবন, তার সংগ্রাম। তার চিন্তা চেতনা আর সাহসিকতা আর বলিষ্ঠতা এ অঞ্চলের ছাত্র যুব সমাজ তথা ইসলাম প্রিয় মানুষের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে তিনি সাতক্ষীরা সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে সর্বমহলে নিজেকে একজন সৎ, দক্ষ ও অমায়িক নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তিনি, ব্যক্তি জীবনে অল্পে তুষ্ট, স্বচ্ছ চিন্তা, সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্থ, অত্যন্ত ভদ্র ন¤্র্র, মার্জিত, পরিশীলিত, মৃদুভাষী এক অসাধারণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন মাওলানা আব্দুল খালেক। নির্লোভ, পরোপকারী, দৃঢ়চেতা, সংগ্রামী জননেতা আব্দুল খালেক তাই খুব অল্প সময়ে সাতক্ষীরার এই জনপদের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। জনগণ তাকে বার বার জনপ্রতিনিধি হিসেবে মনোনিত করেন। যেসব মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডলকে ফাঁসির মতো সর্বোচ্চ দন্ডে দন্ডিত করা হলো তা ন্যায়বিচারের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন অপরাধের তদন্তে স্বাধীনতাত্তোর গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট এবং সরকারি নথিতে কোথাও তাঁর নাম ছিল না। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পূর্ব পর্যন্ত তথাকথিত মিথ্যা অভিযোগে সারা বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা তো দূরে থাক একটি জিডি পর্যন্ত করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান বাংলাদেশকে যারা তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায় তাদের অবৈধ স্বার্থ হাসিলের পথে মাওলানা আব্দুল খালেক ও তাঁর দল জামায়াতে ইসলামীকে তারা প্রধান বাধা হিসেবে ধরে নিয়েছে। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, গণমানুষের প্রাণিপ্রিয় এ নেতাকে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করার চক্রান্ত চলছে।

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডলের মৃত্যুকে গভীর শোক প্রকাশ ও শোক সন্তাপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বিবৃত্তি দিয়েছেন সাতক্ষীরা জামায়াতের সাবেক আমীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান। এক শোক বানিতে তারা বলেন,“সরকার ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। সরকার মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে নিজেদের দলীয় লোকদের দ্বারা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায়ে তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে।

তারা বলেন, অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মন্ডল সাতক্ষীরা অঞ্চলের একজন অবিসংবাদিত নেতা। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্র জীবনের সকল পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেন। কারাগারের বন্দী জীবনে তিনি কুরআন হিফজ করেন। সাতক্ষীরার মানুষ তাঁকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। সরকার তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যা করেছে।

 

Please follow and like us:

Check Also

ভোটার নেই, কেন্দ্রে আনসার সদস্যদের রান্নার আয়োজন

ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। অনেক সময় বিরতি দিয়ে দুই একজন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এমন পরিস্থিতিতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।