মা-মেয়ের খুনের ক্লু ২২ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার যাদবপুর গ্রামের বাড়ি থেকে রুবিনা আক্তার ও তার সাড়ে চার বছরের মেয়ের মুন্নি আক্তারকে ডেকে নিয়ে সাতক্ষীরায় এনে হত্যা করে সীমান্ত নদী ইছামতীতে ফেলে লাশ গুম করার চেষ্টার ঘটনার ২২ দিনেও কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে কবর থেকে লাশ তুলে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদনের শুনানী আজ রোববার সাতক্ষীরা অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।
নিহত রুবিনা খাতুনের স্বামী মুছা শেখ ও তার স্বজনদের অভিযোগ, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পহেলা মার্চ পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে জামাই আদর করায় হত্যা রহস্য কোনদিনও উদ্ধার হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের মুছা শেখ জানান, যাদবপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুল আলীম যাদবপুর কলেজে পড়াশুনা করাকালিন তার ফুফাত বোন যাদবপুর দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা আক্তারকে নিয়ে ঈদের আগের রাতে পালিয়ে যায়। গভীর রাতে তাদেরকে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলেও রুবিনার বয়স কম হওয়ায় তাদের বিয়ে দিতে সম্মত হননি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আবার আলীমের চাকরি যেতে পারে বিধায় মামলাও নিতে পারেনি। এক পর্যায়ে ৬০ হাজার টাকায় দফা রফা হওয়ায় মুচলেকা দিয়ে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়। ভাই না থাকায় স্বজনদের অনুরোধে সম্মান হারানো ফুফাত বোনকে তার (মুছা) সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। এক বছর পর তাদের এক সন্তান হলে নাম রাখা হয় মুন্নি আক্তার। এরপরও আলীমের সঙ্গে রুবিনার সম্পর্ক ছিল তিনি তা জানতেন না।
তিনি আরো জানান, মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে দাদাকে দেখার জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি থেকে মেয়ে মুন্নিকে নিয়ে বের হয় রুবিনা আক্তার। যাওয়ার সময় আলমারীতে রাখা ৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাক থেকে তোলা ঋণের ৭১ হাজার টাকা ও তার (মুছা) ভোটার আইডি কার্ডসহ বিভিন্ন কাগজপত্র ও সোনার গহনা নিয়ে যায় রুবিনা। দুপুর আড়াইটায় প্রথম বার ও বিকেল সাড়ে চারটায় দ্বিতীয় বার রুবিনার মোবাইলে যোযাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে যশোর দু’আত্মীয়ের বাড়িসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় সন্ধান চালিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি মহেশপুর থানায় মিসিং জিডি করেন তিনি। জিডি করার পরদিন আলীম নিখোঁজ রয়েছে বলে তিনি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন। ১২ ফেব্রুয়ারি আলীম তাকে ডেকে জিডি করার জন্য হুমকি দেয়। ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি রাতে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লস্কর জায়াদুল হক তাকে ও আলীমকে থানায় ডেকে নিয়ে পৃথক পৃথক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রকৃতপক্ষে ৮ ফেব্রুয়ারি ছুটি নিলেও পুলিশের কাছে আলীম ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় ছুটি নেওয়ার কাগজ ও নকল ব্যাচ দেখায়। ১৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ থানা থেকে পাঠানো ছবি দেখে তিনি স্ত্রী রুবিনাকে সনাক্ত করেন। আগে মেয়ে মুন্নির লাশ ও পাওয়া গেছে বলে জানতে পারেন। মেয়ে মুন্নির লাশ ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইছামতী নদীর দেবহাটার ছুটিপুর ও ও স্ত্রী রুবিনার লাশ কালিগঞ্জের বসন্তপুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দেবহাটা থানায় একটি জিডি ও কালিগঞ্জ থানায় উপপরিদর্শক ইসরাফিল বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ সময় না দিয়েই তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করেছে। এমনকি ১৫ ফেব্রয়ারি রাতে আলীমকে থানায় নিয়ে আসার পর জিজ্ঞাসাবদের তিন দিন পর আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালেও কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি। ২৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম এম এ জাহিদ আলীমের তিন দিনের রিমা- মঞ্জুর করলেও ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি কালিগঞ্জ থানায় যেয়ে দেখেন পুলিশ তাকে জামাই আদরে রেখেছে। এমনকি শ্যামনগরের হরিতলায় আলীমের শ্বশুর বাড়ি হলেও পুলিশ সেখানে যায়নি। ভাই আলীমকে বাঁচানোর জন্য খুলনায় কর্মরত উপপরিদর্শক সেলিম প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আবু মুছার আভিযোগ, পুলিশের তথ্য মতে ৮ ফেব্রুয়ারির আগের দু’মাসে আলীম মোবাইল ফোনে ২৮৫ বার কথা বলেছে। সেক্ষেত্রে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে ৮০ বার। ১০ ফেব্রুয়ারি মোবাইল বন্ধ হওয়ার আগে কথা বলেছে সাত বার। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতের প্রথম দিকে সাতক্ষীরার এক পুলিশ কনস্টেবল (ফাঁড়িতে কর্মরত) আল আমিনের বাসায় থেকেছে সে। ওইদিন গভীর রাতে সে কালিগঞ্জে ফিরে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। এরপরও তিন দিন রিমাে নিয়ে জিজ্ঞাবাদ করেও কোন ক্লু উদ্ধার না হওয়ার কাথা জানিয়েছে। ফলে বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন তিনি।
সাতক্ষীরা জজ কোর্র্টের আইনজীবী এড. অজয় কুমার সরকার ও এড. আব্দুল মতিন জানান, রুবিনা ও মুন্নি আক্তারের লাশ ফিরে পাওয়ার জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি আদালতে আবেদন করা হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সুধাংশু কুমার হালদারকে সিডিসহ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিচারক আজ রোববার ৪ মার্চ শুনানীর দিন ধার্য করেন। উপ-পরিদর্শকব সুধাংশু কুমার হালদার জানান, রোববার তিনি আদালতে উপস্থিত থাকবেন। তবে তদন্তের স্বার্থে শ্যামনগরের হরিপুরে আলিমের শ্বশুরবাড়িতে কোনদিন না যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, তদন্তে যা পাওয়া গেছে তা যথেষ্ট নয়। তবে প্রয়োজনে আলীমকে জিজ্ঞাসাবদের জন্য আবারো রিমান্ডে নেওয়া হবে।

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরা সদরের আগরদাঁড়ীতে সড়ক দূর্ঘটনায় পিতা-পুত্র নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: সদর উপজেলার আগরদাড়ী মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় কাঠবোঝাই ট্রলির তলায় পড়ে পিতা-পুত্র নিহত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।