আমরা সমাধান পাইনি : ড. কামাল হোসেন

ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ  নির্বাচন ইস্যুতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে একই টেবিলে বসে বহুল আলোচিত সংলাপ করেছে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক জোট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পৌনে চার ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের মূল দাবিগুলোর কোনো সুরাহা না হওয়ায় রাজনৈতিক সঙ্কট রয়ে গেল। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবির উত্তরে সংলাপে আওয়ামী লীগ স্পষ্টভাবে বলেছে, ‘সংবিধানের বাইরে তাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়েও সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন। সভা-সমাবেশ করতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা পর্যায়ক্রমে বক্তব্য রাখেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার, তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপে সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা বাদ দেয়া ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি মতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবিগুলোর যৌক্তিকতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেই নোট নেন।
সংলাপের একপর্যায়ে সংসদ ভেঙে দেয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ, যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে সেখানে নির্বাচন কিভাবে হয়? প্রধানমন্ত্রী ড. কামালকে বলেন, আপনি তো সংবিধান বিশেষজ্ঞ। আমি যতদূর জানি, ভারতে যখন নির্বাচন হবে, তখন নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন। ব্রিটেনে যখন নির্বাচন হবে, তখন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য সংসদীয় গণতন্ত্রে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও একই পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া উচিত কি না?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আপনারা নির্বাচন চাচ্ছেন। দেশে নিরপেক্ষ কে আছেন বলুন।
খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে, জামিন বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, নজিরবিহীনভাবে সাজা দ্বিগুণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা এর উত্তরে বলেন, খালেদা জিয়াকে তো আদালত সাজা দিয়েছে। আমরা তো খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করিনি। হাইকোর্ট যদি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেন, তাহলে আমরা কী করব?
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি তো আইনগত লড়াই করেছে। একটা মামলা ১০ বছর ধরে চলেছে। আরেকটি চলেছে আট বছর। প্রথম মামলা তো আমরাও করিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলা হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে নিরাপদ সড়ক অন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব আন্দোলনের সময় গ্রেফতার সবাই ছাড়া পেয়েছে। মুক্তি পেয়েছে সবাই। শহিদুল আলমের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, তার (শহিদুল) কথাগুলো আপনারা কেউ পড়েছেন কি না? একটু পড়ে দেখবেন তার কথাগুলো।
ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচনের জন্য কী কী করা যায়, তার সমাধান আপনি দিন।
সব দলকে সমান সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দলের কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। আমি নিজেই বলেছি আপনাদের যেন জনসভা করতে দেয়া হয়। আমার দলের সাধারণ সম্পাদককে বলেছি যেকোনো কর্মসূচিতে যেন বাধা না দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল, জ্বালাও পোড়াও করেছিল। এখন কেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নিরপেক্ষ সরকার দিতে আগ্রহী নয়Ñ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের এমন বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, দেশে এখন সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই।
জানা গেছে, সংলাপে একাদশ জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে এমন প্রস্তাবে মতাসীনরা কোনো সায় দেয়নি।
বিশেষ কোনো সমাধান পাইনি : ড. কামাল
সংলাপ শেষে বেইলী রোডের বাসায় ড. কামাল বলেন, সভা-সমাবেশের অনুমতি ব্যতিরেকে সংলাপে কোনো সমাধান আসেনি। তিনি বলেন, আমরা গেছিলাম আজকে গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপ ছিল। আমরা তিন ঘণ্টা সেখানে ছিলাম। আমাদের নেতৃবৃন্দ সবার অভিযোগ ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সবার কথা শোনার পরে প্রধানমন্ত্রী বেশ লম্বা বক্তৃতা দিলেন। তবে ওখানে কোনো বিশেষ সমাধান আমরা পাইনি।
পরে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী সভা-সমাবেশের বিষয়ে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকাসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর কোনো বাধা থাকবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে সভা করতে চাইবে সেখানে কোনো বাধা দেবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনি ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক মামলা সম্পর্কে উনি বলেছেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মামলা ও গায়েবি মামলার তালিকা আপনারা দেন। আমি অবশ্যই বিবেচনা করব, যাতে হয়রানি না হয় তা বিবেচনা করব। তিনি বলেন, উত্থাপিত দাবি-দাওয়া নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।
ড. কামাল আরো বলেন, আমরা সংলাপের সুযোগ পেয়েছি। আমরা আমাদের কথা বলে এসেছি উনাকে। উনি জানতে পেরেছেন। উনি উনার কথাগুলো বলেছেন, উনার মনের কথা আমরা কিছুটা জানতে পেরেছি।
আমি খুব সন্তুষ্ট নই : মির্জা ফখরুল
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন এই বিষয়গুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা হতে পারে। বিএনপি কী এতে আশাবাদী প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, আমি তো বলেছি যে ভাই আমি খুব সন্তুষ্ট নই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। মানা-না মানার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের কর্মসূচি আমরা দিয়েছি, এ নিয়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সংলাপে সমাধানের আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে কি না প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তফসিল পেছানোর বিষয়ে বলেছি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন তফসিল দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
সংলাপ থেকে আপনারা কী পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবসময় কী সব কিছু অর্জন হয় নাকি।
আ স ম রব বলেন, একদিনে সব পাওয়া যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন
সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই : কাদের
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সাথে অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটা কথা খুব স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী সংলাপের চিঠিতে স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন, সংলাপে সংবিধানসম্মত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তাই আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না।’
সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা কিছু কিছু অভিযোগ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগের পরিপ্রেেিত আমাদেরও তো একটা বক্তব্য আছে। সেটাও খুব ভদ্রভাবে শালীনতার সাথে বলা হয়েছে। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’
কাদের বলেন, ‘এখানে কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, সভা-সমাবেশ চলবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। তবে, রাস্তা বন্ধ করে কোনো সভা-সমাবেশ না করে একটা মাঠে হতে পারে। অনেক মাঠ আছে। ঢাকার ব্যাপারে তিনি বলেছেন, দরকার হলে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি কর্নার করে দেবো। সেটি যারা ব্যবহার করবেন, তাদের কাছে ভাড়া দেয়া হবে। এটার একটি মেনটেইনেন্স থাকবে। বিষয়টি নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের ছয় নম্বর দফা হলো বিদেশী পর্যবেক আসবেন এবং নির্বাচন মনিটরিং করবেন। এ ব্যাপারেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমাদের সাপোর্ট থাকবে। আর ইভিএমের ব্যপারে তিনি বলেছেন, ইভিএম একটি আধুনিক পদ্ধতি। তবে এবার হয়তো নির্বাচন কমিশন সীমিতভাবে ব্যাবহার করবে। এতে আমাদের সমর্থন থাকবে।’
বিরোধীদের ওপর বিভিন্ন মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘তারা রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে একটা প্রশ্ন তুলেছেন। এই ব্যাপারে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনাদের যে মামলাগুলোকে রাজনৈতিক মামলা মনে হয়, সে তালিকা আমার কাছে পৌঁছে দিন। এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরপরই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সরকারের অনেক বিষয়, যেগুলো নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত, সেগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত হবে। এসব নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই।’
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, একটি অবাধ-নিরপে ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার কোনো ধরনের হস্তপে করবে না। শুধু যে সব বিষয়ে ইসি সহযোগিতা চাইবে, সেসব বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।’
খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘এটা তো আইনি বিষয়। আমার তো মনে হয়, সংলাপের মধ্যে এটা আসতে পারে না। খালেদা জিয়া যে দু’টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, এই মামলাগুলো কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেয়া।’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেনÑ দেখুন আপনি বলুন, আপনিও তো ইলেকশন করেছেন, সেই ৭৩ সাল থেকে অনেকবার ইলেকশন করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন ছাড়া কোনো নির্বাচনেই সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল না।’
সংলাপে বিএনপির প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল জনতে চাইলে জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা খুশি কি অখুশি, এটা তারা বলতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীকে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আপনি যে কথাগুলো বলেছেন, তার অনেক কিছুই আমরা জানতাম না। তিনি বলেছেন, তিনি আজকের সংলাপে সন্তুষ্ট।’
আবারো সংলাপ হবে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বলেছেন, তার দরজা সবসময় উন্মুক্ত। প্রয়োজনে ছোট পরিসরে আরো আলোচনা হতে পারে।’
অন্য নেতারা যা বললেন : সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আলোচনায় কিছু অগ্রগতি আছে। দলটির আরেক নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আলোচনা খুবই সুন্দর হয়েছে। তবে আলোচনার সফলতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বলতে পারব না।
আর সরকারের জোটে থাকা জাসদের (আম্বিয়া-বাদল) নেতা মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, খুবই ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ইটস অ্যা পলিটিক্যাল স্টার্ট।
পৌনে ৪ ঘণ্টাব্যাপী সংলাপ শেষ হয় রাত ১০টা ৪০ মিনিটে।
অংশ নিলেন যারা : সংলাপে মহাজোট ও ১৪ দলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐক্যফ্রন্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলগুলোর নেতাসহ ২৩ জন প্রতিনিধি। তারা হলেনÑ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, মো: আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, রমেশ চন্দ্র সেন, মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুস সোবহান গোলাপ, হাছান মাহমুদ, শ ম রেজাউল করিম, আনিসুল হক, দিলীপ বড়ুয়া, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও মইন উদ্দীন খান বাদল।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস ও ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম; গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম সফিক উল্লাহ, মোতাব্বের খান; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল মালেক রতন ও তানিয়া রব; জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, আ ব ম মোস্তফা আমিন ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সংলাপের একপর্যায়ে রাত বাড়ায় ৯টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জন্য হালকা খাবার পরিবেশন করা হয়। ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা জানান, সৌজন্যের খাতিরে তারা হালকা খাবার গ্রহণ করেন। তবে তারা কোনো নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন নি। এরপর রাত ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে আবারো আলোচনা শুরু হয়ে তা পরবর্তী আধাঘণ্টা স্থায়ী হয়।
বিচারের ভার আপনাদের ওপর : প্রধানমন্ত্রী
বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, গণভবন জনগণের ভবন। সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গত ৯ বছর মতায় থেকে দেশের যা উন্নয়ন করেছে তা সবাই দেখতে পেয়েছেন। এখন সবাই মিলে দেশটাকে গড়তে হবে। কারণ দেশটা আমাদের সবার। সবাই মিলে দেশটাকে গড়তে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। আজকের এই সংলাপ বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমি এটা বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দেবো। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৯ বছর ১০ মাস হতে চলল আমরা সরকারে। এই সময়ের মধ্যে দেশে কত উন্নয়ন করতে পেরেছি তা নিশ্চয়ই আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন। এতে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে। দিনবদলের যে সূচনা করেছিলাম সেই দিন বদল হচ্ছে। এটাকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এসেছে স্বাধীনতা। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজকে সেই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারি সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এর আগে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রবেশ করে। গণভবনের প্রবেশ পথে নিয়মিত নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে ঐক্যফ্রন্টের গাড়িবহর গণভবনে ঢোকে। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও এপিএস-২ সাইফুজ্জামান শেখর।
সাত দফা দাবি ও ১১ দফা ল্েযর ভিত্তিতে সংলাপের জন্য গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ড. কামাল হোসেন স্বারিত চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পরদিন আওয়ামী লীগ সংলাপে সম্মতির কথা জানায়। আজ শুক্রবার বিকল্প ধারার সভাপতি বি. চৌধুরীর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শাসক দলের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
গণভবনের বাইরে মোমবাতি প্রজ্বলন : এ দিকে ফলপ্রসূ সংলাপের দাবিতে গণভবনের ভেতরে যখন সংলাপ চলছিল তখন বাইরে ঐক্য প্রক্রিয়ার কর্মী-সমর্থকেরা নানা স্লোগান সংবলিত প্লাকার্ড ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। কারও কারও হাতে মোমবাতি ও ব্যানার দেখা যায়। তাতে লেখা ছিল ‘সংবিধান ওহি নয়, জনগণের জন্যই সংবিধান’, ‘জনগণ ভোট দিতে চায়, ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ফলপ্রসূ সংলাপ চাই’, ‘সংবিধান জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাধা নয়’ ইত্যাদি।

Please follow and like us:

Check Also

ভোটার নেই, কেন্দ্রে আনসার সদস্যদের রান্নার আয়োজন

ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। অনেক সময় বিরতি দিয়ে দুই একজন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এমন পরিস্থিতিতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।